
ছবি: Photo: Collected
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দ্রুত ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তাঁর মতে, নির্বাচনের মাধ্যমেই জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ এবং তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব।
শনিবার (১৮ জানুয়ারি) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি-২০২৪ আয়োজিত একটি সিম্পোজিয়ামের শেষ অধিবেশনে তিনি এসব কথা বলেন। ‘শ্বেতপত্র এবং অতঃপর: অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, সংস্কার জাতীয় বাজেট’ শীর্ষক এ সিম্পোজিয়ামে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, “নির্বাচনের ঘোষণা দ্রুত হওয়া উচিত। জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ এবং সমস্যাগুলোর সমাধান নির্বাচনের মাধ্যমেই সম্ভব। বিগত ১৬ বছরে সংসদীয় গণতন্ত্রের কোনো চর্চা হয়নি। আবার গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য নির্বাচন অপরিহার্য।”
ঋণখেলাপি এবং অর্থ পাচার নিয়ে উদ্বেগ
অনুষ্ঠানে উপস্থিত সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান বিএনপির অবস্থান নিয়ে কিছু প্রশ্ন করেন। বিশেষ করে ঋণখেলাপিদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ বিষয়ে। তিনি উল্লেখ করেন, কিছু ঋণখেলাপি নির্বাচনের আগ মুহূর্তে ৫ শতাংশ ঋণ পরিশোধ করে ভোটে অংশ নেন। এ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা ঋণখেলাপিদের মনোনয়ন না দেওয়ার বিষয়ে আন্তরিকভাবে চেষ্টা করব। এটা রাতারাতি সমাধান করা সম্ভব নয়, তবে আমরা এ সমস্যা মোকাবিলায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
তিনি আরও বলেন, “অর্থ পাচারকারীরা যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেন, সে বিষয়েও আমরা সচেতন। আমাদের লক্ষ্য থাকবে এই প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনা, যাতে অনৈতিক কার্যকলাপ রোধ করা যায়।”
অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ নিয়ে প্রশ্ন
ছয় মাসের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের সব সমস্যা সমাধান করা সম্ভব কিনা- এমন প্রশ্নের উত্তরে মির্জা ফখরুল বলেন, “ছয় মাসের মধ্যে সব সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। এটা আমাদের দলের কৌশল। তবে আমাদের প্রধান লক্ষ্য দ্রুত নির্বাচন নিশ্চিত করা, যেন জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়।”
অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ নিয়ে রেহমান সোবহান আরও জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব হাসি দিয়ে বলেন, “এটি আমাদের কৌশলগত সিদ্ধান্ত।”
সংস্কার নিয়ে বিএনপির পরিকল্পনা
মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা দুই বছর আগেই সংস্কারের পরিকল্পনা প্রকাশ করেছি। এ জন্য ৩১ দফা কর্মসূচি দিয়েছি, যেখানে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সংস্কারের কথা বলা হয়েছে। আমরা রাজনৈতিক সংস্কারে বেশি গুরুত্ব দিতে চাই।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, “আমরা ক্ষমতায় গেলে কেউ পরপর দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। সংসদ দুই কক্ষ বিশিষ্ট হবে। যারা সরাসরি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন না, তারাও যেন রাষ্ট্র পরিচালনায় অংশ নিতে পারেন, এমন ব্যবস্থা করব। বৈষম্য দূরীকরণে জাতীয় সরকার গঠনের পরিকল্পনাও আমাদের রয়েছে। গণতন্ত্রের জন্য প্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে গত ১৫ বছরে ধ্বংস করা হয়েছে। আমরা সেগুলো পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেব।”
সংসদীয় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের অঙ্গীকার
মির্জা ফখরুল বলেন, “আমাদের সংসদে গত ১৫-১৬ বছরে গণতন্ত্রের কোনো চর্চা হয়নি। আমরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পুনরুদ্ধারের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। জনগণের সমর্থন নিয়ে আমরা এই সংস্কার এবং পুনর্গঠনের কাজ করব।”
তিনি আরও বলেন, “সংস্কার শুধু দলীয় স্বার্থে নয়, এটি একটি জাতীয় প্রয়োজন। আমরা জনগণের কাছে ঐক্যবদ্ধ থাকব এবং তাদের আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে কাজ করব। জাতীয় সরকার গঠন এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পুনর্গঠনই হবে আমাদের লক্ষ্য।”
ক্ষমতায় এলে বিএনপির সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন
ক্ষমতায় গেলে বিএনপি আসলেই সংস্কার কার্যকর করতে পারবে কিনা- এ বিষয়ে প্রশ্ন উঠলে মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা জনগণের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ। আমাদের প্রচেষ্টা হবে সবক্ষেত্রে উন্নয়ন নিশ্চিত করা। অনেকেই ভাবছেন ছয় মাসের মধ্যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। তবে বাস্তবতা ভিন্ন। আমরা নির্বাচনে জোর দিচ্ছি, কারণ এটি গণতন্ত্র এবং দেশের সঠিক পথ খুঁজে পাওয়ার একমাত্র উপায়।”
তিনি আরও বলেন, “জনগণের প্রত্যাশা পূরণে আমাদের দায়িত্বশীল হতে হবে। অতীতের ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা নতুন পথে এগিয়ে যেতে চাই। গণতন্ত্রের চর্চা এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠা করাই আমাদের মূল লক্ষ্য।”
আওয়ামী লীগের ভূমিকা নিয়ে মন্তব্য
আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা এ বিষয়ে বহুবার পরিষ্কার করেছি। এটি দেশের জনগণের সিদ্ধান্ত। আমরা কোনো রাজনৈতিক দলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে চাই না।”
তিনি আরও বলেন, “নির্বাচনের মাধ্যমে সবার জন্য একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান আসতে পারে। এজন্য আমরা বিশ্বাস করি, জনগণই এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে।”
শেষ মন্তব্য
মির্জা ফখরুল বলেন, “আমাদের রাজনৈতিক সংস্কার এবং অর্থনৈতিক সংস্কারের পরিকল্পনা দীর্ঘমেয়াদি। এটি রাতারাতি সম্ভব নয়, তবে আমাদের লক্ষ্য স্পষ্ট। জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য আমরা সবার সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। নির্বাচনের মাধ্যমেই দেশের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা সম্ভব।”
অনুষ্ঠানে উপস্থিত দর্শকদের অনেকে মির্জা ফখরুলের বক্তব্যকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছেন। তবে বিএনপির সামগ্রিক পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়ন দেখতে সময়ই চূড়ান্ত উত্তর দেবে।
repoter